ইসলাম ধর্ম একটি শান্তির ধর্ম। যুগ যুগ ধরে ইসলাম শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করে গিয়েছে। আর মহান আল্লাহতালা এই পৃথিবীর যা কিছু রয়েছে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য যা যা প্রয়োজন তা সকল কিছু দিচ্ছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। এই বিশাল পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন মানব জাতির জন্য। তাই একজন মুমিন ব্যক্তি হিসেবে অর্থাৎ মুসলমান জাতি হিসেবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা প্রত্যেকটি মুসলমানের দায়িত্ব।
তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত একজন মুসলিম হয়ে ইসলাম ধর্মের সকল বিধি বিধান মেনে চলা সর্বদা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য কামনা করা। আর এই নৈকট্য অর্জন করতে হলে প্রত্যেক মুসলমানকে সঠিক সময় নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ ইবাদতের মধ্যে সর্বশেষ্ঠ ইবাদত হল নামাজ। তাই আপনাদের জন্য আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আজকের নামাজের সময়সূচি সম্পর্কে জানিয়ে দেব। আর এই বিষয় গুলো জানতে আপনারা প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।
ইসলাম ধর্মে মূলত পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে আর এই পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় তম স্তম্ভ হল নামাজ। একজন মুসলিম ব্যক্তি তার রবকে সন্তুষ্ট করার সবচেয়ে উওম মাধ্যম হলো নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মাধ্যমে নিজের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি তার সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন ও সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে। তাছাড়া একজন বান্দা নামাজের মাধ্যমে তার মনের সকল চাওয়া পাওয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে উপস্থাপন করতে পারে। আর এই নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে তাহলে সঠিক সময়। তাছাড়া নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম ব্যক্তি তার রবের সাথে খুব দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। তাই প্রত্যেক বান্দাই চায় রবের নৈকট্য লাভের জন্য, অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য নিয়মিত নামাজ আদায় করতে। কিন্তু নামাজের সঠিক সময় রয়েছে। সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায়ের তাই অনেক ফজিলত রয়েছে।
একজন মুসলমানের সঠিক সময় নামাজ আদায় করা শুধু ধর্মীয় নির্দেশ নয় এ ক্ষেত্রে তিনি সকল পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন তাই শুধু রবের সন্তুষ্টির অর্জন নয় নিজের জন্য যথাসময়ে নামাজ আদায় করাটা উত্তম। একজন মুসলিম কে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করতে হয় আর এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুলো হল ফজর, জহুর, আসর, মাগরিব ও এশা। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুলো সঠিক ও যথা সময় রয়েছে সেই যথা সময় মেনটেন করে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নামাজ আদায় করতে হবে।
ইসলাম ধর্ম অনুসারে বারবার বলা হয়েছে প্রত্যেকটি মুসলমান কে যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ যথা সময় নামাজ আদায় করলে অধিক সওয়াব ফজিলত রয়েছে। যথাসময়ে নামাজ আদায় করাটা অতি উত্তম একটি কাজ। আমরা যারা মুসলমান আমরা সবাই কমবেশি একটা বিষয় জানি নামাজ সাধারণত একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় না প্রত্যেকটি নামাজের আলাদা আলাদা একটা সময় রয়েছে আর প্রত্যেকটি নামাজের আলাদা আলাদা সময় অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হয়।
একজন মুসলিম ব্যক্তিকে সঠিক সময় নামাজ আদায় করতে হলে অবশ্যই তাকে নামাজের সঠিক সময় জেনে থাকতে হবে তা না হলে সে অসময়ে নামাজ আদায়ের ফলে অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে তাকে গুনার ভাগীদারি হতে পারে। একজন প্রকৃত মুসলমান অবশ্যই সঠিক সময়ে নামার আদায় করে থাকেন। তাছাড়া একজন সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য অবশ্যই একজন বান্দাকে সঠিক সময় নামাজ আদায় করতে হবে। চলুন তাহলে জানা যাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঠিক সময় সম্পর্কে।
১. আজকে ফজর নামাজের সময়: ইসলাম ধর্ম অনুসারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুলোর মধ্যে যে ওয়াক্ত সর্বপ্রথম আসে তা হল ফজরের নামাজ। সুবাহ সাদিক থেকে শুরু করে সূর্য উদয় পর্যন্ত ওয়াক্ত থাকে ফজরের। প্রত্যেক মুমিনের উচিত তাই নির্দিষ্ট সময়ের ফজরের নামাজ সম্পন্ন করা। আজকের ফজরের নামাজের সময়সূচী ভোর পাঁচটা পনেরো থেকে শুরু করে সকাল ছয়টা পর্যন্ত। তাই প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তির উচিত এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফজরের নামাজ আদায় করা।
২. আজকের জোহরের নামাজের সময়: সাধারণত ফজরের নামাজের পরে জোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। সূর্য যখন মধ্যম আকাশে থাকে তখন ওয়াক্ত শুরু হয় জোহারের।ঋতু ভেদে এই নামাজের কোন সময় পরিবর্তন হয় না। কারণ সূর্য যখন মাথার উপরে অবতীর্ণ হয় তখন এই নামাজের সঠিক সময় ধরা চলে। অর্থাৎ আমরা যদি একটু স্পষ্ট ভাবে বলি দুপুর একটা থেকে শুরু করে দুপুর আড়াইটা অব্দি জোহরের নামাজ আদায় করা যায়। যোহরের নামাজ মোট বার রাকাত আদায় করতে হয়। চার রাকাত ফরজ চার রাকাত সুন্নত দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল। আমরা অনেক সময় এই সময়টা বেশ ব্যস্ত থাকি তাই কাজের জটিলতার কারণে ফরজ নামাজ আদায় করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সঠিক সময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা উত্তম।
৩. আজকের আসরের নামাজের সময়: সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে পড়ে অর্থাৎ কোন মানুষের ছায়া সুস্পষ্টভাবে মাটিতে পড়ে তখন আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। আর এই আসরের ওয়াক্ত সাধারণত মাগরিবের ওয়াক্তর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকে। অর্থাৎ আজকের আসরের ওয়াক্তের সময়সূচী বিকেল চারটা থেকে শুরু করে পাঁচটা পনেরো পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত থাকে। এটা ঋতু ভেদে পরিবর্তন হতে পারে কারণ অনেক সময় দিন ছোট থাকে রাত বড় হয় এক্ষেত্রে এই নামাজের সময়সূচী পরিবর্তন হয়। আসরের নামাজ মূলত আট রাকাত। চার রাকাত সুন্নত এবং চার রাকাত ফরজ। ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। তবে মুসাফিরদের ক্ষেত্রে আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়লে কোন সমস্যা নেই।
৪. আজকে মাগরিবের নামাজের সময়: পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের মধ্যে চতুর্থ তম ওয়াক্ত হল মাগরিবের ওয়াক্ত। মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় সাধারণত সূর্যাস্তের পর থেকে। অর্থাৎ চারদিকে যখন হালকা অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এই ওয়াক্তে নামাজের সময়সীমা খুবই কম। মাগরিবের আজানের পাঁচ মিনিট পরে ই এই নামাজ আদায় করতে হয়। এই ওয়াক্তে সাধারণত ফরজ নামাজ আগে আদায় করতে হয়। এই ওয়াক্তে মোট সাত রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। তিন রাকাত ফরজ দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল আদায় নামাজ এর মাধ্যমে মাগরিবের নামাজ শেষ করতে হয়। মাগরিবের সালাতের গুরুত্ব অত্যাধিক তাই এই নামাজ যথা সময় আদায় করতে হয়।
৫. আজকে এশার নামাজের সময়: পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে সর্বশেষ যে ওয়াক্ত তার নাম এশা। এই নামাজের সময় সাধারণত মাগরিবের নামাজের বেশ কিছুক্ষন পর পড়া হয়ে থাকে। মাগরিবের নামাজের এক থেকে দেড় পরেই এশার নামাজের সময় হয়ে থাকে। মূলত এই ওয়াক্ত টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়াক্ত। কারণ দিনের সর্বশেষ নামাজ এই ওয়াক্তের মাধ্যমে শেষ হয়ে থাকে। এই ওয়াক্তের সর্বমোট নামাজ হলো পনের রাকাত। চার রাকাত সুন্নত,চার রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল ও সর্বশেষ তিন রাকাত বিতর নামাজের মাধ্যমে এই ওয়াক্ত শেষ হয়ে থাকে। এশার নামাজের ফজিলত অত্যাধিক। এশার উ আপনার বরকত দিবে। আপনার যাবতীয় হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তাই সঠিক সময় এই নামাজ আদায় করাটা উত্তম।
মহান সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে মানব জাতি কে সৃষ্টি করেছে শুধু তার ইবাদত করার জন্য। আর এই ইবাদতের মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট অর্জন করাই হলো প্রত্যেকটি মুসলমান ব্যক্তির প্রধান কাজ। আর মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন পেতে হলে সঠিক সময় সঠিক নিয়ম মেনে নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে একজন মুমিন ব্যক্তি দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেকটি প্রাপ্তবয়স্ক নরনারী মুসলিম ব্যক্তিকে সঠিক সময় মেনে নামাজ আদায় করা উচিত। কারণ মহান আল্লাহতালার কাছে ওই ব্যক্তিটি সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি যিনি উত্তম সময় নামাজ আদায় করেন এবং নামাজের জন্য কোন অবহেলা তার ভিতরে নেই। তাই প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তি সঠিক নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো আদায় করব।