রোজা রাখার নিয়ত বাংলায় এবং আরবিতে

একজন মুসলিম ব্যক্তির ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তেমনি একজন মুসলমান ব্যক্তির উপর রমজান মাসের রোজা বাধ্যতামূলক ইবাদত হিসেবে ফরজ করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে যেমন কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নামাজ আদায়

করতে হবে তেমনি রমজান মাসের রোজার আদায় করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে রোজা পালন করতে হবে। তাই ইসলামের বিধান অনুযায়ী রমজান মাসের রোজা পালন করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ে জেনে রোজা পালন করতে হবে তা একজন মুসলিম ব্যক্তির জেনে রোজা পালন করা উচিত।

রমজানের রোজা পালন করার জন্য সর্ব প্রথম যে বিষয়টি একজন মুসলমান ব্যক্তির মাথায় রাখতে হবে তা হলো রোজা রাখার সঠিক নিয়ত। নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে যেমন নিয়ত করে নামাজ আদায় করতে হয় তেমনি রমজান মাসে রোজা পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিটি মুসলমানদের নিয়ত করে রোজা পালন করতে হয়। প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই রোজা পালন করার ক্ষেত্রে নিয়ত করাটা অত্যন্ত জরুরী বিষয়।

রোজা মানে ত্যাগ স্বীকার করা। একজন মুসলিম ব্যক্তিকে শুধু পানাহার থেকে নয় পৃথিবীর সকল ধরনের খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা নামে হল রোজা। রমজানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আল্লাহ্ তাআলা এ মাসটি কে ইবাদতের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাছাড়া বিশেষ এই মাস টিকে সহিফা ও আসমানি কিতাব নাজিল করার জন্য মনোনীত করেছেন। অধিকাংশ কিতাব এ মাসেই নাজিল হয়েছে।

রমজান মাসের রোজা পালন কে ফরজ আখ্যায়িত করে আল্লাহ্ তাআলা সুরা বাকারা ১৮৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, রমজান মাস কোরআন নাজিল করা হয়েছে আর এ কোরআন মানব জাতির জন্য পথের দিশারী ও সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন তাই একে কোনো ভাবেই অবহেলা করা যাবে না আর কোন ব্যক্তি যদি এই বিষয়টি কে অবহেলা করে তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। তিনি আরো একটি আয়াতে উল্লেখ করেন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রমজান মাসটি পাবে সে যেন রোজা রাখে,আর যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফরে থাকে,সে পরবর্তী গুনে সেই পরিমাণ রোজা পালন করে নেয়।

রমজান মাস এমন মর্যাদা সম্পন্ন একটি মাস যে মাসটি জুড়ে রয়েছে অশেষ রহমত ও বরকত। কোন ব্যক্তি যদি রমজান মাসে সুন্নত নামাজ আদায় করে থাকেন তাহলে সে ফরজ নামাজের সমতুল্য সওয়াব পেয়ে থাকবেন। কোন ব্যক্তি যদি নফল নামাজ আদায় করে থাকেন তাহলে সে সুন্নত নামাজের সমতুল্য সওয়াব পেয়ে থাকবেন। তাছাড়া রমজান মাসে শুরুতে আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন আর জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং শয়তান কে শিকল বদ্ধ করে রাখেন।

তাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। তাছাড়া পবিত্র আল কুরআনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে শয়তান মানুষের শত্রু এর থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। প্রতিটি খারাপ কাজে মানুষকে উৎসাহ প্রদান করে শয়তান। একজন মুসলিম ব্যক্তি যখনই ভালো কাজ বা মহান আল্লাহ তালার ইবাদতের জন্য নিজেকে প্রস্তুতি করেন তখনই শয়তানের কাজ সে কাজে বাধা প্রদান করা। তাই হাদিসে শরিফে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও অসৎ কাজ পরিত্যাগ করল না, তার রোজা রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।

রমজানের রোজাদার ব্যক্তিদের জন্য মহান আল্লাহতালা বিশেষ একটি জান্নাত স্থাপন করেছে। যারা শুধু আল্লাহর হুকুম মেনে আল্লাহর ভয়ে একজন মুসলিম ব্যক্তি সকল খারাপ কাছ থেকে নিজেকে বিরত রেখে রমজান মাসের প্রতিটি রোজা রেখেছে তারা ওই বিশেষ জান্নাতে যেতে পারবেন। মোট জান্নাতের সংখ্যা আট টি আর এই আটটি জান্নাতের মধ্যে একটি জান্নাতের নাম হল রাইয়ান। আর এই রাইয়ান জান্নাতে রোজাদার ব্যক্তিরা থাকবেন। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ব্যতীত অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে বোঝা যায় একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য রমজান মাসের রোজা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই রমজান মাসের প্রতিটি রোজা একজন মুসলিম ব্যক্তিকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে পালন করা উচিত।

পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তা’আলা। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারীর জন্য রোজা একটি ফরজ ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলামের বিধান অনুযায়ী। তাই প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে রমজান মাসের প্রতিটি রোজা আদায় করা উচিত। যেহেতু ইসলামের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত হল মনের ইচ্ছা বা মনের বাসনা কে নিয়ত বলা হয়। এটা অন্তরের কাজ, মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয়।

জিহবার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোন কাজের আরাম্ব মনের মধ্যে যে ইচ্ছা পোষণ করা হয় আসলে সেটাই নিয়ত। নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিয়ত সম্পর্কে বলেন নিশ্চয় প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পায়। যার নিয়ত যতটা সুন্দর তার ইবাদত ততটা সুন্দর। তাই রমজানের রোজা পালন করার ক্ষেত্রে নিয়তটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কোন ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা করার ক্ষেত্রে যদি আরবিতে নিয়ত না করতে পারে সে ক্ষেত্রে শুধু বাংলাতে নিয়ত করলে সে নিয়ত হয়ে যাবে। প্রতিটি ইবাদত করার ক্ষেত্রে নিয়ত করার প্রধান কারণ হলো এক ইবাদত কে অন্য ইবাদত থেকে পার্থক্য করার জন্য। কেননা ইবাদত বিভিন্ন ধরনের। যেমন ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নাত,নফল ইত্যাদি। সুতরাং নিয়তের মাধ্যমেই পার্থক্য হবে সে ফরজের নিয়ত করেছে, নাকি ওয়াজিবের, নাকি সুন্নাতের। তাই রমজানের রোজা রাখা যেমন ফরজ তেমনি রোজার জন্য নিয়ত করাও ফরজ।

নিয়ত ছাড়া দিনভর না খেয়ে উপবাস ও স্ত্রী সহবাস না করলেও রোজা হবে না। রোজা রাখার জন্য সাহরির পর অন্তরের দৃঢ় সংকল্প থেকে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মুখে উচ্চারণের কোন বিষয় নয়। কোন ব্যক্তি মনে মনে নিয়ত করলে সেটা নিয়ত হয়ে যায় কারণ মহান আলো তালা প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরের অন্তর স্থলের সকল বিষয় জেনে থাকে তাই রমজান মাসের রোজা অবশ্যই আমরা নিয়ত করব।

রমজান মাসের রোজা ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী আরবিতে বিশেষ একটি নিয়ত রয়েছে কোন মুসলিম ব্যক্তি চাইলে আরবিতে এই নিয়তটি করতে পারবেন। রমজানের রোজার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে রোজা রাখতে হবে নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফার দাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আংতাস সামিউল আলিম। আর কোন ব্যক্তি যদি আরবিতে না পারে তাহলে সে ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবে।

হে আল্লাহ আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের রোজা পালনের উদ্দেশ্যে তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ নিয়ত করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। তাছাড়া রমজান মাসের ইফতারের আগে বিশেষ একটি দোয়া রয়েছে সেই দোয়াটির মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করতে হবে। আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা, ওয়া আফতারতু বিরাহমা তিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন বিশেষ এই দোয়াটি পড়ে ইফতার করাটা উত্তম।

একজন মুসলিম ব্যক্তিকে রোজা পালনের ক্ষেত্রে সেহেরী ও ইফতারের গুরুত্ব যেমন রয়েছে তেমনি রোজা পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে নিয়ত পালন করে রোজা পালন করার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি মুসলমান ব্যক্তিকে সেহরি খাওয়ার আগে রোজার নিয়ত করাটা অত্যন্ত জরুরী। রোজা রাখার নিয়ত আরবিতে বা বাংলা উচ্চারণ আপনি যেভাবেই করেন না কেন রোজা রাখার পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত করা জরুরি। তবে এটা জরুরী নয় যে আপনাকে আরবীতে নিয়ত করতে হবে।

কোন ব্যক্তি যদি রমজান মাসে রোজার ক্ষেত্রে নিয়ত না করে তাহলে সেই রোজা মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হয় না এক্ষেত্রে নিয়ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তা বোঝা যায়। আমরা অনেকেই রমজান মাসের সঠিক নিয়ত সম্পর্কে জানিনা তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা রোজার সঠিক নিয়ত কিভাবে করতে হয় এ বিষয়টি জানিয়ে দিলাম। আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রোজার নিয়ত জেনে সঠিক ভাবে রোজার নিয়ত করবেন।

Updated: December 23, 2023 — 11:58 am

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *