সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত

আল কুরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। এটা আল্লাহ তা‘আলার বাণী। আল্লাহর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাহ ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর উপর তা নাযিল হয়েছিল কুরআনের সূরার নামকরণ এবং নাযিলের কারণ হিসেবে বিশেষ কোন উপলক্ষ থাকলেও তা সেই বিশেষ উপলক্ষ বা কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এর তাৎপর্য ব্যাপক। খন্ড খন্ড আকারে মানবজাতির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নাযিল করা হয় কুরআন। তাই আমরা এখন আপনাদের জন্য কুরআনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা সম্পর্কে আলোচনা করব।

আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের কে জানিয়ে দেবো সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত এই সূরাটি সম্পর্কে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ তাই এই যুগে আমরা সবাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুজে থাকি তাই প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্য আমরা আজকে জানিয়ে দেবো সূরা মাউন বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত। তাছাড়া আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে কুরআন মাজীদের গুরুত্বপূর্ণ সূরা গুলো বাংলা অর্থসহ এর ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সূরা মাউন সম্পর্কে।

কোরআনুল কারীম নির্দিষ্ট সংখ্যক সূরা ও আয়াত দ্বারা বিন্যস্ত। কোরআনুল কারীমের মোট সূরা সংখ্যা ১১৪টি। এই সূরা গুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন পড়া প্রত্যেক মুসলমান ভাই-বোনদের জন্য অপরিহার্য, আমরা কোরআন শুধু তেলাওয়াতই করব না বরং তা বুঝব এবং সেই সঙ্গে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করব। তাছাড়া পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহতালা মানব জাতির হেদায়েতের জন্য নাজিল করেছেন। মহান রাব্বুল আলামিন ইহকাল ও পরকাল জগতে কিভাবে একজন মুসলিম ব্যক্তি তার জীবন পরিচালনা করবে তার সকল ব্যাখ্যা কোরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ যেমন একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক ইবাদত তেমনি কোরআন শিক্ষা প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য একটি ফরজ। কুরআন একটি বরকত ময় কিতাব যা মহান আল্লাহতালা দয়া করে আমাদের ওপর বিশেষ নেয়ামত হিসেবে দান করেছেন। আর কুরআনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে এই পৃথিবীতে কেন তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

মহান আল্লাতালা প্রতিটি মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন। আর এ ইবাদত করার কথার অর্থ শুধু আল্লাহর কাছে সেজদা করাই নয় বরং পবিত্র কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী তার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর গুনাবলী ও নিজেদের মাঝে অর্জন করা। যাতে মানুষ এ দুনিয়াতে আল্লাহর প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। এর জন্য একমাত্র প্রয়োজন ও উপায় হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ এবং তা সঠিক অর্থ জেনে বুঝে তেলাওয়াত করা।

কুরআন মাজিদের প্রকৃত শিক্ষার গ্রহণ করে এর অর্থ জেনে জীবন পরিচালনা করাই হলো একমাত্র ইহকাল ও পরকালের সফলতার প্রধান পথ। তাছাড়া একজন ব্যক্তির দৈনিক ইবাদতের মধ্যে নামাজ অন্যতম। আর একজন ব্যক্তিকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হলে কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা গুলো জেনে থাকতে হবে। কারণ নামাজ এমন একটি বিষয় সেখানে সহীহ শুদ্ধভাবে সূরা গুলো সঠিক ভাবে না পাঠ করলে মহান আল্লাহতালার দরবারে সেই নামাজ কবুল হয় না। সে কারণেই সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করা, কুরআন অধ্যয়ন করা এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করা- এ সব ইবাদতের উদ্দেশ্যও একই। যাতে মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহতালা পৃথিবীর বুকে যে বিষয় গুলো সম্পর্কে হুকুম দিয়েছে সেই হুকুম পালন করা একজন মুসলমানের ফরজ। আর এই বিষয়গুলো সম্পর্কে একজন মুসলিম ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের সূরা গুলো সম্পর্কে থেকে জেনে নিতে পারবে। কারণ পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরাই কোন না কোন বিশেষত্ব রয়েছে। কোরআন তেলাওয়াত মহান আল্লাহতালার খুব পছন্দের একটি ইবাদত। তাই আমাদের কুরআনের শিক্ষা লাভে প্রতিদিন কুরআন অধ্যয়ন জরুরি। আর কুরআন অধ্যয়নের ও তেলাওয়াতের সময় এর আদব ও গুরুত্ব রক্ষায়ও কুরআনের বাণী মেনে চলা আবশ্যক একটি বিষয়। যেখানে কুরআনের আলোচনা হয় কিংবা কুরআন তেলাওয়াত হয় সেখানে ভদ্রভাবে অবস্থান করা এবং আলোচনা শোনা জরুরি। আর তাতে বান্দার ওপর রহমত নাজিল হয় করেন মহান আল্লাহতালা। তাই আমরা প্রত্যেকেই কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে কোরআনের প্রত্যেকটি সূরা এর অর্থসহ ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে বুঝে পাঠ করব। এমন টাই নির্দেশনা এসেছে ইসলামের বিধান অনুযায়ী।

সূরা মাউন কুরআন মাজীদের ছোট সূরা গুলোর মধ্যে একটি কোরআন মাজীদের ছোট সূরা হলেও এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক তাৎপর্য পূর্ণ। পবিত্র কুরআনের শেষের অংশে এই সূরাটি পাওয়া যায় অর্থাৎ সূরা মাউন কোরানের ১০৭ নম্বর সূরা। এই সূরাটির মক্কায় অবতীর্ণ করা হয়েছে আর এই সূরার আয়াত সংখ্যা মোট ৭। পবিত্র কোরআনে এমন কোন সূরা নেই যেখানে কোন বিষয় বস্তু ছাড়া সুরাটি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর সূরা মাউন এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে মানব জাতির উদ্দেশ্যে কাফের ও মুনাফেকদের কতিপয় দুষ্কর্ম উল্লেখ করে তার জন্য জাহান্নামের শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে।

এ সূরায় এমন সব নামাজীদের কে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাযে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামায পড়ে। তাই আমরা যখন পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অবস্থায় নামাজ পড়বো অবশ্যই মহান আল্লাহ তালার সন্তুষ্ট লাভের আশায় এবং পরকালের মুক্তি লাভের আশায় নামাজ পড়বো। পৃথিবীর বুকে নিজের উদ্দেশ্যকে হাসিল করার জন্য আমরা যেন নামাজ না পড়ি। এই বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা মাউন নাযিল করেছেন শুধুমাত্র মক্কা বাসীর হেদায়েতের জন্য এবং নামাজের প্রতি পৃথিবীর মানুষ যেন যত্নবান হয় সেই বিষয়টির ক্ষেত্রে। এই সুরাটিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে সব ব্যক্তিগণ সালাত এর ব্যাপারে উদাসীন এবং যারা ইয়াতিম ও অভাব গ্রস্তকে সাহায্য করে না তাদের প্রতি ধ্বংসের বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া এই সূরাটিতে বিশেষ কিছু বিষয় বস্তু রয়েছে সেই বিষয় বস্তুর সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তোমরা আল্লাহর প্রত্যেকটি নিয়ামত কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করো কারণ মহান আল্লাহতালা প্রত্যেকটি নেয়ামতের হিসাব গ্রহণ করবেন আর সেই নিয়ামত গ্রহণ করে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় কর। এই সূরায় মহান আলো তালা প্রথম বিচার দিবসের কথা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন। এবং তিনি আরেকটি বিষয় বলেছেন যে বা যারা এতিমকে গলা ধাক্কা দেয় মূলত তারা বিচার দিবসকে অস্বীকার করে। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতালার বিচার দিবসকে অস্বীকার করে তিনি সম্পূর্ণভাবে কাফের হয়ে যাই।

সূরা মাউন কোরআনের ছোট সূরা হলেও এর মর্যাদা অনেক বেশি তাই আমরা অনেকেই সূরা মাউন আমল করার আগ্রহ রয়েছে কিন্তু আরবি না জানার কারণে আরবি পড়ার অক্ষমতার কারণে অনেকেই বিশেষ এই সূরাটি পাঠ করতে পারি না তাই তাদের জন্য আমরা স্পষ্টভাবে বাংলা উচ্চারণ সহ এর সঠিক অর্থ জানিয়ে দিলাম। সূরা মাউন এর বাংলা উচ্চারণ। আরাআই তাল্লাযী ইউকাযযি বুবিদ্দীন। ফাযা লিকাল্লাযী ইয়াদু উল ইয়াতীম ওয়ালা ইয়াহুদ্দু আলা তা‘আ মিল মিছকীন। ফাওয়াইঁলুলিলল মুসাল্লীন। আল্লাযীনাহুম আন সালা-তিহিমি ছা-হূন। আল্লাযীনা হুম ইউরাঊনা।

ওয়া ইয়ামনা‘ঊনাল মা-‘ঊন। সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। সূরা মাউন এর বাংলা অর্থ হল আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচার দিবস কে মিথ্যা বলে?সে সেই ব্যক্তি যে এতিম কে গলা ধাক্কা দেয় এবং মিসকীন কে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না। অতএব দুর্ভোগ সে সব নামাজীর যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে খবর যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না। আর তাদের জন্য মৃত্যুর পর কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।

কুরআন এবং হাদিসের আলোকে সূরা মাউন এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে যা একজন মুসলিম ব্যক্তিকে নিয়মিত ভাবে সূরা মাউন তিলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে। সূরা মাউন অবশ্যই আমাদের সকলের মুখস্ত করে রাখা উচিত এই সূরাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা বিশেষ করে কোরআনুল কারিমের সকল সূরা গুলো আমাদের জন্য মঙ্গল জনক এবং কল্যাণকর আমরা যদিও ছোট সূরা গুলো সহজে মুখস্ত করা যায়। আমাদের বর্তমান সমাজে চিএ সূরা মাউনের যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট। অন্যায়ভাবে মানুষ এখন এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করছে।

এবং আল্লাহ বলছেন এরা নামযের প্রতি অবহেলা করে এবং অমনোযোগী। এবং এদের নামায আল্লাহ কবুল করেন না। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছেন যারা লোক দেখানো ইবাদাত করে এবং সাহায্য করে। আর এরাই হচ্ছে মুনাফিক। অর্থাৎ এরা ভিতরে নিজের দাম্ভিকতা দেখানোর জন্যে মানুষদের সাহায্য করছে অথচ বাহিরে এমন ভাব দেখায় তারা সমাজ সেবা করছে। এরাই হলো আসল মুনাফিক। এবং এরাই হবে কাফিদের দলে। মূলত লোক দেখানো নামাজ আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না।

Updated: December 20, 2023 — 8:23 pm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *